শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ অপরাহ্ন
তরফ স্পোর্টস ডেস্ক : প্রতিপক্ষের তারকাসমৃদ্ধ আক্রমণভাগের পাল্টা জবাব দিতে শুরু থেকে পেরুও খেলতে থাকে আক্রমণাত্মক ফুটবল। কাঙ্ক্ষিত ফলও মেলে। দু’দফায় এগিয়ে জয়ের দারুণ সম্ভাবনাও জাগিয়েছিল দলটি। তবে নেইমারের দারুণ হ্যাটট্রিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা দ্বিতীয় জয় নিয়ে ফিরেছে ব্রাজিল।
লিমায় বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে কাতার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ৪-২ গোলে জিতেছে রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। স্বাগতিকদের গোল দুটি করেন আন্দ্রে কারিয়ো ও রেনাতো তাপিয়া। ব্রাজিলের অন্য গোলটি রিশার্লিসনের।
জমজমাট লড়াইয়ে বল দখলের পাশাপাশি আক্রমণেও আধিপত্য ছিল ব্রাজিলের। তবে, প্রথমার্ধের চিত্র ছিল প্রায় সমানে সমান। বিশেষ করে শেষ দিকে খেই হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা, পিছিয়ে পড়ার পর। মেজাজ হারানোর খেসারতও দিতে হয়েছে তাদের। ম্যাচ শেষ করতে হয়েছে এক জন কম নিয়ে। বেঞ্চেরও একজন খেলোয়াড় দেখেছেন লাল কার্ড।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রথম জয়ের সন্ধানে থাকা পেরু প্রতিপক্ষে ভুলের সুযোগ নিয়ে শুরুটা ভালো করে। ডি-বক্সে সতীর্থের উদ্দেশে বল বাড়িয়েছিলেন স্বাগতিকদের এক মিডিফল্ডার। ক্লিয়ার করতে গিয়ে মার্কিনিয়োস উল্টো ডি-বক্সের বাইরে আন্দ্রে কারিয়োর পায়ে তুলে দেন। জোরালো ভলিতে ঠিকানা খুঁজে নেন এই মিডফিল্ডার।
খানিক পর আরেকটি ধাক্কা খায় বলিভিয়াকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে বাছাই শুরু করা ব্রাজিল। ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন পিএসজি ডিফেন্ডার মার্কিনিয়োস। বদলি নামেন রদ্রিগো কাইয়ো।
আট মিনিট পর সমতা টানার সহজ সুযোগ পেয়েছিলেন রবের্তো ফিরমিনো। রিশার্লিসনের হেডে বাড়ানো বল ধরে গোলরক্ষককে একা পেয়েও ব্যর্থ হন লিভারপুল ফরোয়ার্ড।
২৮তম মিনিটে নেইমারের সফল স্পট কিকে সমতায় ফেরে ব্রাজিল। ডি-বক্সে পিএসজি ফরোয়ার্ডকে পেরুর মিডফিল্ডার ইয়োতুন জার্সি টেনে ধরে খেলতে বাধা দেওয়ায় পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
তিন মিনিট পর আবারও জালে বল পাঠান নেইমার। তবে আক্রমণের শুরুতে রিশার্লিসন অফসাইডে থাকায় বেশ খানিকটা সময় নিয়ে ভিএআরের সাহায্যে গোল দেননি রেফারি। ৪১তম মিনিটে ডি-বক্সে দারুণ পজিশনে সতীর্থের ক্রস পেয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে দলের হতাশা বাড়ান ফিরমিনো।
কিছুটা সৌভাগ্যসূচক গোলে ৫৯তম মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় পেরু। তাদের এই গোলটির শুরুও কিছুটা প্রথমটির মতো। ইয়োতুনের লম্বা থ্রো ইন হেডে ক্লিয়ার করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের পায়ে তুলে দেন কাইয়ো। ডি-বক্সের বাইরে ফাঁকায় বল পেয়ে জোরালো ভলি মারেন রেনাতো তাপিয়া। সামনে একজনের পায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়।
এ যাত্রায় গোল শোধ করতে একটুও দেরি করেনি ব্রাজিল। ৬৪তম মিনিটে নেইমারের দূরের পোস্টে নেওয়া কর্নারে ফিরমিনোর হেডে বল লক্ষ্যেই ছিল। আরও নিশ্চিত হতে গোললাইনের মুখ থেকে টোকায় বল জালে জড়ায় এভারটন ফরোয়ার্ড রিশার্লিসন। অফসাইড ছিল কি-না, দীর্ঘক্ষণ ভিএআরে দেখে গোলের বাঁশি বাজান রেফারি।
৭৭তম মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সহজ সুযোগ নষ্ট হয় ব্রাজিলের। এভেরতনের পাস ডি-বক্সে ফাঁকায় পেয়ে খানিক আগে বদলি নামা এভেরতন রিবেইরো শরীরটাকে ঘুরিয়ে যে শট নিলেন তা লক্ষ্যের ধারেকাছেও ছিল না।
৮৩তম মিনিটে নেইমারের আরেকটি সফল স্পট কিকে ম্যাচে প্রথমবারের মতো এগিয়ে যায় ব্রাজিল। ডি-বক্সে এই তারকাই ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টিটি পায় তারা।
এই গোলের পরই যেন মেজাজ হারিয়ে বসে পেরু। ৮৯তম মিনিটে বল দখলের লড়াইয়ে অহেতুক রিশার্লিসনের মুখে আঘাত করে শুরুতে হলুদ কার্ড দেখেন ডিফেন্ডার কার্লোস জামব্রানো। পরে ভিএআরের সাহায্যে তাকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান রেফারি। তিন মিনিট আগে লাল কার্ড দেখেন তাদের বেঞ্চের গোলরক্ষক কাসেদাও।
যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে সহজ গোলে সব অনিশ্চয়তার ইতি টেনে দেন নেইমার। এভেরতন রিবেইরোর চিপ পোস্টে লেগে ফেরার পর অনায়াসে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার।
দলকে জয় এনে দেওয়ার পথে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠেছেন নেইমার, তার মোট গোল ৬৪টি। পেছনে ফেলেছেন ‘দা ফেনোমেনন’ রোনালদোকে (৬২)। নেইমারের ওপরে আছেন শুধু কিংবদন্তি পেলে, ৭৭ গোল নিয়ে।
গত বছর কোপা আমেরিকা জয়ের পথে গ্রুপ পর্বে ও ফাইনালে পেরুকে হারিয়েছিল ব্রাজিল। তবে হেরে বসেছিল গত বছর সেপ্টেম্বরে, প্রীতি ম্যাচে। এক বছর বাদে আবারও দলটিকে হারাল নেইমাররা।